﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ﴾
‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো আর ঘোষণা করলো: ‘আমি একজন মুসলমান’ (হামীমুস সাজদাহঃ ৩৩)
–আয়াতটি নাযিল হয়েছেঃ
- মক্কার কঠিন বিরোধিতার পরিবেশে।
- রাসূলের অনুসারীদের উপর চলছিল কঠিন নির্যাতন।
- এমন পরিবেশে “আমি একজন মুসলমান” বলাটা সহজ কাজ ছিল না।
- সেই পরিবেশে বলা হচ্ছেঃ সেই ব্যক্তির কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে ডাকে।
- দায়ীর দাওয়াত হবে আল্লাহর দিকে।
- দায়ীর সামনে কোন পার্থিব উদ্দেশ্য থাকবে না।
- দায়ীর বৈশিষ্টঃ ৩টি
১. দায়ী তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেবেন।
২. দায়ী আমলে সালেহের অধিকারী হবেন।
৩. দায়ী “আমি একজন মুসলমান”-এমন ঘোষনা প্রদান করবেন।
১. দায়ী তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেবেন। আর তা হলোঃ
- দাসত্ব কেবল আল্লাহর।
- আনুগত্য কেবল আল্লাহ।
- উপাসনা কেবল আল্লাহ।
- ভয় কেবল আল্লাহকে।
- পাওয়ার আশা কেবল আল্লাহকে।
- আনুগত্য কেবল আল্লাহর হুকুমের।
- অনুসরণ কেবল আল্লাহর বিধানের।
- আনুগত্যের উদাহরণঃ
মানুষ কাজের সময় চিন্তা করে কার গোলামী ও আনুগত্য করছি এবং কার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। একই ভাবে মানুষের সকল তৎপরতার ও কাজের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত বিধান অনুযায়ী ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবন গঠনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।
২. দায়ী আমলে সালেহের অধিকারী হবেন। আর তা হলোঃ
- তাকে নেক আমল করতে হবে।
- আমল ঠিক না থাকলে দাওয়াতে প্রভাব থাকে না।
- যে জিনিসের দাওয়াত দেয়া হবে, সেই জিনিসের প্রতিচ্ছবি হতে হবে।
- বন্ধু, সমাজ, আত্মীয় জনের নিকট উচ্চ ও পবিত্র চরিত্রের ব্যক্তি বলে স্বীকৃত হতে হবে।
- শ্রেষ্ট দায়ী রাসূল সা. ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী, যার সাক্ষী দিতো তার চরম বিরোধী প্রতিটি মানুষ।
- শ্রেষ্ঠ দায়ী রাসূল সা. এর চরিত্র এমন ছিল যে, তিনি যার যত কাছের ছিলেন, তিনি তত আগে তার নবুয়াতের স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমনঃ হযরত খাদিজা রা., হযরত যায়েদ রা., হযরত আবু বকর রা., হযরত আলী রা.
- দায়ীর জীবন হবে দাওয়াতের মাপকাঠিতে তৈরী দাওয়াতের বাস্তব সাক্ষ্য ও প্রতিচ্ছবি।
- দায়ীর আমল দাওয়াতের সাক্ষ্য বহন করবে।
- দায়ীর জীবন হবে রাসূল সা. এর ব্যাপারে আবু জেহেলের উক্তির মতোঃ
“হে মুহাম্মদ সা.! আমরা তো তোমাকে মিথ্যা বলছি না। আমরা তো ঐ দাওয়াতকে মিথ্যা বলছি যা তুমি নিয়ে এসেছো”। অর্থাৎ নিকৃষ্টতম দুশমনও তাঁর সত্যবাদিতার প্রবক্তা ছিলো। এটাই হচ্ছে নৈতিক চরিত্রের পবিত্রতা, স্বভাব ও আচরণের উচ্চতা।
৩. দায়ী “আমি একজন মুসলমান”-এমন ঘোষনা প্রদান করবেন।
– কুরআন ঘোষনা করছেঃ
﴿وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ﴾ …এবং সে ঘোষণা করে আমি একজন মুসলামান।
- রাসূলের সময়ে মক্কায় “আমি একজন মুসলমান” ঘোষনা প্রদান সহজ ছিলনা, মামুলি ছিলো না।
- “আমি একজন মুসলমান” ঘোষনা করা মানে হিংস্র পশুদেরকে নিজের উপর হামলা করার আহবান করা।
- অর্থাৎ দায়ী নিকৃষ্টতম শত্রুদের সামনে, চরম বিরুধী পরিবেশেও নিজের মুসলমান পরিচয় লুকিয়ে না রাখা।
- মুসলমান পরিচয় দিতে কোন লজ্জা, সংকোচ ও ভয় থাকবে না।
- দায়ী হবেন দৃঢ়চেতা, বাহাদুর।
- দায়ী হওয়া কোন কাপুরুষের কাজ নয়।
- রাসূল সা. এর জীবনে বারবার এই দৃঢ়চেতা মনোভাব প্রদর্শিত হয়েছে। হুনাইনের যুদ্ধ এখানে উল্লেখযোগ্য।