পরিবার সমাজের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনের বহু শারঈ বিধানের লালনক্ষেত্র হচ্ছে পারিবারিক জীবন। প্রকৃত ইসলামী পরিবার গঠনের উপরেই মূলত নির্ভর করে আমাদের পার্থিব ও পরকালীন জীবনের কামিয়াবীর সিংহভাগ। পারিবারিক জীবনের সূচনা হয় বিয়ে-শাদীর মাধ্যমে; একজন নারী ও একজন পুরুষ যখন তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করে। সাধারণত একটি বর্ধিত পরিবারের একটি শাখা বা প্রশাখা হিসাবে এর উৎপত্তি ঘটলেও সময়ের ব্যবধানে এবং পর্যায়ক্রমে এ দাম্পত্য জীবন একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব লাভ করে। নিজেই মূল হিসাবে আবির্ভূত হয়ে আবার শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি করে। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে মানব সন্তানের বিকাশ ও বিস্তৃতির এটাই হচ্ছে চিরন্তন প্রাকৃতিক উপায়। পরিবারের মূল ভিত্তি দাম্পত্য জীবনকে যদি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গঠন করা যায়, তাহ’লে সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে বিস্তৃত ও বর্ধিত পরিবারকেও ইসলামের আলোকে গড়ে তোলা সহজ হবে। পক্ষান্তরে যদি দাম্পত্য জীবনে গলদ ঢুকে যায় এবং ইসলামী আদর্শের ঘাটতি হয়ে যায়, তাহ’লে পরিবারের ইসলামীকরণ অবশ্যই দুরূহ হয়ে পড়বে। সেকারণ আদর্শ পরিবার গঠনের প্রাথমিক এবং অন্যতম প্রধান কাজটি বিবাহ-শাদীর পূর্বেই তথা পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের সময়েই করতে হবে। স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনদারীর বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য হাদীছে তাকীদ দেওয়া হয়েছে। সৌন্দর্য, বংশ বা সামাজিক মর্যাদা অথবা সম্পদ এসব মানুষের কাছে আপাতত দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হ’লেও দ্বীনদারী বাদ দিয়ে শুধু এগুলোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলে আদর্শ পরিবার গঠনের প্রধান উপাদানেই ভেজাল ঢুকে যাবে। পাত্রী নির্বাচনের সময় শুধু স্ত্রীই নয় বরং একই সাথে সন্তানের মাও নির্বাচন করা হচ্ছে, এটা মাথায় রাখতে হবে। তাই ভবিষ্যৎ সন্তানদের জন্য কেমন মা নির্বাচন করা হচ্ছে, সেটাও খেয়াল করতে হবে। শুধু পাত্রী নির্বাচন নয়, পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দ্বীনদারীকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। কারণ একটি পরিবার সন্তান-সন্ততি স্বামী-স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায় আদর্শ ও সুন্দর হ’তে পারে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের সমাজে আজকাল উচ্চ ডিগ্রী ও বৈষয়িক অবস্থাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। ইসলামী জ্ঞান, আমল-আখলাকের বিষয়টি একেবারেই গৌণ। অথচ পিতা-মাতা দ্বীনদার না হ’লে পরিবারে সন্তান-সন্ততিদেরকে সঠিক ইসলামী শিক্ষা দানের উপযোগী পরিবেশ তৈরী করা সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।