লেখক তার সমস্ত ভ্রমণকালে তাঁর অনুসন্ধাণী দৃষ্টি দ্বারা প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের উন্নতি ও প্রাচুর্যের জোয়ার যেমন অবলোকন করেন, তেমনি আখেরাত বিস্মৃতি ও বল্গাহীন বিষয়-আসক্তির ফলে তাদের বিরামহীন অস্থির জীবন, অবাধ যৌনাচারের কষাঘাতে বিধ্বস্ত মানবতার কংকালসার চেহারা, অশান্ত হৃদয়ের আর্তচিৎকার এবং এ সব থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য তার ব্যাকুলতা দিবালোকের ন্যায় প্রত্যক্ষ করেন।
এবং এর প্রতিকার স্বরূপ তিনি উম্মতের একজন একনিষ্ঠ ‘মুসলিহ’ হিসাবে ইসলাম প্রদত্ত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও চারিত্রিক সঞ্জীবনী সুধা এ সমস্ত পিপাসার্ত মানবতার সামনে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় আসর, ঘরোয়া আলোচনা ও ব্যক্তিগত সাক্ষাতে উদারভাবে পরিবেশন করেন, তুলে ধরেন তাদের সামনে সুস্থ ও সুখময় জীবনের সঠিক নির্দেশনা।
লেখক ভ্রমণ কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে সে সব বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। সাথে সাথে সে সমস্ত দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও নৈসর্গিক বিবরণ এবং ভ্রমণকালীন তাঁর বিচিত্র ও ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতা-যেমন, সমস্ত পৃথিবী পরিভ্রমণ, সাগরের তলদেশ ও উত্তর মেরু ভ্রমণ, উত্তরে পৃথিবীর সর্বশেষ স্থলভাগে আযান দিয়ে দুপুর রাতে সূর্য সামনে নিয়ে নামায আদায় করা ইত্যাদি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার বিবরণ এবং শিকড় সন্ধানী ঐতিহাসিকের ন্যায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের মণিমুক্তা দ্বারা তাঁর এ ভ্রমণ কাহিনীকে অধিকতর সমৃদ্ধ করে তুলেছেন।
ভ্রমণে আনন্দ আছে, শিক্ষা আছে। হযরতের ভ্রমণ কাহিনীতে আনন্দ ও শিক্ষা যুগপৎভাবে চিত্রিত হয়েছে। ফলে পাঠক লিখনীর বাহনে সওয়ার হয়ে ভ্রমণে তার সহযাত্রী হয়ে একই সঙ্গে শিক্ষা ও আনন্দের সরোবরে অবগাহন করে। পুলক অনুভব করে। শিক্ষা লাভ করে। এ বই পাঠে একজন মর্দে মুমিনের ‘বাসিরাত ও ‘ফেরাসাত’-এর নজরে পৃথিবীর বসন্তের মাঝে হেমন্তের সম্যক উপস্থিতি পাঠক নিজেও উপলদ্ধি করে। নশ্বর পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী সুখ-দুঃখের অন্তরালে স্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তত হওয়ার আহবান সুষ্পষ্ট শুনতে পায়।