মানত বা মান্নত আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। যেমন আমরা কখনো কখনো বলি, যদি আমি পরীক্ষায় পাশ করি তাহলে মাদরাসায় একটি ছাগল দান করব। এটি একটি মানত। অতএব, কোনো বিষয় অর্জিত হওয়ার শর্তে কোনো কিছু করার ওয়াদাকে সাধারণত: আমরা মানত বলে থাকি। কেউ বলে মানত, আবার কেউ বলে মান্নত। তবে এটি শর্তযুক্ত মানত। আবার শর্তহীন মানতও আছে। যেমন, আনন্দের খবর শুনে কেউ বলল, আমি এটা লাভ করেছি? তাই আমি মসজিদে একটি ফ্যান দান করব। এটাও মানত। তবে শর্তহীন।
মানত কাকে বলে?
আমরা বাংলাতে বলি মানত । আরবিতে বলা হয় نذر (নযর) বহুবচনে নুযুর। মানত বা নযরের আভিধানিক অর্থ হল, নিজের দায়িত্বে নেয়া। যা নিজের দায়িত্ব নয় তা অপরিহার্য করে নেয়া।
শরয়ি পরিভাষায় মানত বলা হয়: নিজের উপর এমন কিছু ওয়াজিব (আবশ্যিক) করে নেয়া যা আসলে ওয়াজিব ছিল না। সেটা শর্তযুক্তও হতে পারে আবার শর্ত মুক্তও হতে পারে।
মানতের হুকুম
মানত করার বিধান কি? ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত না মুস্তাহাব?
আসলে মানত করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং মনে করি মানত করা খুব সওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সওয়াবের কাজ নয়। বরং মাকরূহ। অধিকাংশ ইমাম ও ফেকাহবিদের অভিমত এটাই। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি কেউ মানত করে ফেলে তাহলে তাকে তা পালন করতেই হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী ও নিয়ম-নীতি আছে। খানিক পর আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব।
মানত করা নিষেধ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে : আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়।‘ (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫) ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘মানত কোনো কিছুকে আগেও করে না, পিছেও করে না। বরং এর দ্বারা কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে বের করা হয়।‘ (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৬, সহিহ সুনান নাসায়ি)
ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এটা শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে মাল খসায়।‘ (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৭, আহমাদ) আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমরা মানত করবে না। কেননা মানত তাকদীরের কোনো কিছু-কে ফেরাতে পারে না। এটা শুধু কৃপণ থেকে সম্পদ খসায়।‘ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৯, সহিহ সুনান তিরমিজি, সহিহ সুনান নাসায়ি) সাহবি আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যেই বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায়নি।‘ (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩১)