মাছের রহস্যবলী

0/5 No votes

Report this app

Description

বাংলাদেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, দারিদ্র বিমােচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্য খাতের অবদান অনস্বীকার্য। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের সকলস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন ও মৎস্যচাষিদের নিরন্তর পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ আজ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এদেশে রয়েছে ১৩ লক্ষ পুকুর-দিঘী, যার আয়তন ৩.৯৭ লক্ষ হেক্টর। আরাে আছে ১০.৩২ লক্ষ হেক্টর আয়তনের ২৪ হাজার কি.মি. নদ-নদী, ১.১০ লক্ষ হেক্টর আয়তনের প্রায় ১১ হাজার বিল, ৫,৪৮৮ হেক্টর আয়তনের বাঁওড়, ৬৮,৮০০ হেক্টরের কাপ্তাই লেক, ১.৭৭ লক্ষ হেক্টর আয়তনের সুন্দরবন এবং ২৬.৭৬ লক্ষ হেক্টর আয়তনের প্লাবন ভূমি। বাংলাদেশের মাটি, পানি ও জলবায়ু মাছ চাষের জন্য খুব উপযােগী। মাছ চাষ তুলনামূলকভাবে লাভজনক হওয়ায় চাষ পদ্ধতি ক্রমে নিবিড় থেকে নিবিড়তর বা নিবিড়তমের দিকে যাচ্ছে। চাষি অধিক লাভের আশায় পুকুরে প্রতি শতাংশ মাছের মজুদ ঘনত্ব বৃদ্ধি করছে। প্রয়ােগ করছে প্রয়ােজনের চেয়ে অধিক খাদ্য। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে জলজ পরিবেশ নষ্ট হয়ে রােগজীবাণুর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে মাছ নানা রােগে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় মহামারি আকারে প্রচুর মাছ মারা যায়। এতে একদিকে যেমন মাছের উৎপাদন কম হয় অন্যদিকে তেমনি চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেকেই মাথায় হাত দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আবার রােগ নিরাময়ের জন্য অনেক চাষি মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়ােটিক, রাসায়নিক দ্রব্য বা কখনাে নিষিদ্ধ দ্রব্য যেগুলাে পরিবেশবান্ধব নয় সেগুলােও পুকুরে ব্যবহার করে। যার ফলে নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস মাছ মানুষের জন্য আর নিরাপদ থাকে না। এছাড়া অনেক সময় রােগ দমনে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়। রােগ চিকিৎসায় অনেকেই প্রতি শতাংশ জলায়তনে ১.০-১.৫ কেজি চুন ব্যবহার করে।
এতে রােগ ভালাে হয় ঠিকই কিন্তু পানির পিএইচ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় মাছে পীড়ন (Stress) পড়ে। বেশি মাত্রায় চুন প্রয়ােগের ফলে জলজ পরিবেশের প্লাঙ্কটন, পােকামাকড়, বেনথােস ইত্যাদি মারা যায় এবং খাদ্য শিকল (Food chain) নষ্ট হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। মাছের বৃদ্ধির হার কমে যায়। মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত রােগ নিরাময়ের জন্য অনেকক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়ােটিক ব্যবহার করা হয়। এতে ধীরে ধীরে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে অ্যান্টিবায়ােটিকের প্রতি প্রতিরােধ ক্ষমতা জন্মায়। এছাড়া অ্যান্টিবায়ােটিকের অব্যবহৃত অংশের খারাপ প্রভাব জলজ পরিবেশে এবং মত্স্য ও মৎস্যজাত দ্রব্যের মধ্যেও থেকে যায়। অন্যদিকে ছত্রাকজনিত রােগ নিরাময়ের জন্য মেলাকাইট গ্রিন, ফরমালিন, কপার সালফেট ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়, যেগুলাের ঋণাত্মক প্রভাব আছে। তাই টেকসই মৎস্য চাষ ও মৎস্য উৎপাদন বজায় রাখার নিমিত্তে পরিবেশবান্ধব রােগ ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। মাছ চাষে সমস্যার কথা চিন্তা করে চাকরি জীবনের দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, মাছের রােগের ওপর পিএইচডি এর অর্জিত জ্ঞান এবং দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জার্নালের আর্টিকেল ও পুস্তক থেকে সাহায্য নিয়ে মাছের রােগ ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক বইটি সাধারণ মৎস্য চাষির বােধগম্য করে সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। আশা করি, বইটি মাছের রােগ চিকিৎসায় চাষিদের পরামর্শ প্রদানে মৎস্য সম্প্রসারণকর্মীর সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া মৎস্য বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, গবেষক, পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট সকলেই বইটি পাঠে উপকৃত হবেন। লক্ষণ দেখে সুনির্দিষ্টভাবে রােগ চেনার জন্য অধিকাংশ ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া হয়েছে। মাছের রােগের নাম, দায়ী রােগজীবাণু, রােগাক্রান্ত মাছ ও দায়ী রােগ জীবাণুর ছবি, রােগের লক্ষণ, রােগের বিস্তার, রােগের প্রতিকার/চিকিৎসা ও প্রতিরােধ ব্যবস্থা, চিকিৎসার নিয়মাবলি, চাষির প্রশ্ন ও উত্তর প্রভৃতি বিষয় বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook comments