ফিরকা ও নাজিয়া

0/5 No votes

Report this app

Description

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন যে, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের উপরে তেমন অবস্থা আসবে, যেমন এসেছিল বনু ইস্রাঈলের উপরে এক জোড়া জুতার পরস্পরের সমান হওয়ার ন্যায়। এমনকি তাদের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকে, যে তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে যেনা করেছে, তাহ’লে আমার উম্মতের মধ্যে তেমন লোকও পাওয়া যাবে যে এমন কাজ করবে। আর বনু ইস্রাঈল ৭২ ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। তারা বললেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার উপরে টিকে থাকবে’। 

অতঃপর আহমাদ ও আবুদাঊদ হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, ৭২ দল জাহান্নামী হবে ও একটি দল জান্নাতী হবে। আর তারা হ’ল- আল-জামা‘আত। আর আমার উম্মতের মধ্যে সত্বর এমন একদল লোক বের হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তি পরায়ণতা এমনভাবে প্রবহমাণ হবে, যেভাবে কুকুরের বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির সারা দেহে সঞ্চারিত হয়। কোন একটি শিরা বা জোড়া বাকী থাকে না যেখানে উক্ত বিষ প্রবেশ করে না।[1]

সনদ : আলবানী ‘হাসান’ বলেছেন। তিরমিযী ‘হাসান’ বলেছেন বিভিন্ন ‘শাওয়াহেদ’-এর কারণে। হাকেম বিভিন্ন বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন, هذه أسانيد تقام بها الحجة في تصحيح هذا الحديث ‘এই সকল সনদ হাদীছটি ছহীহ হওয়ার পক্ষে দলীল হিসাবে দন্ডায়মান’।[2] ছাহেবে মির‘আত উক্ত মর্মের ১০টি হাদীছ উল্লেখ করেছেন ‘শাওয়াহেদ’ হিসাবে। অতঃপর তিনি বলেন, এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ সমূহের কোনটি ‘ছহীহ’ কোনটি ‘হাসান’ ও কোনটি ‘যঈফ’। অতএব افةراق الأمة -এর হাদীছ নিঃসন্দেহে ‘ছহীহ’ (صحيح من غير شك)।[3]

সারমর্ম : মুসলিম উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে একটি মাত্র দল শুরুতেই জান্নাতী হবে।

হাদীছের ব্যাখ্যা : হাদীছটি افةراق الأمة নামে প্রসিদ্ধ। এর মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী লুকিয়ে রয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে মুসলিম উম্মাহর আক্বীদাগত বিভক্তি ও সামাজিক ভাঙনচিত্র যেমন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তেমনি তা থেকে নিষ্কৃতির পথও বাৎলে দেওয়া হয়েছে। এটাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, যত দলই সৃষ্টি হউক না কেন, একটি দলই মাত্র শুরু থেকেই জান্নাতী হবে, যারা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের আক্বীদা ও আমলের যথার্থ অনুসারী হবে।

(لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِيْ مَا أَتَىْ عَلَى بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ) ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মতের উপরে তেমন অবস্থা আসবে, যেমন অবস্থা এসেছিল বনু ইস্রাঈলের উপরে এক জোড়া জুতার পরস্পরে সমান হওয়ার ন্যায়’। لَيَأْتِيَنَّ ‘অবশ্যই আসবে’ অর্থ ‘আপতিত হবে’। এখানে اتي ক্রিয়াটির পরে على অব্যয়টি এসে তাকে ‘সকর্মক’ করেছে। যার সঠিক তাৎপর্য দাঁড়াবে الغلبة المؤدة إلي الهلاك ‘ঐরূপ বিজয় যা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়’। যেমন আল্লাহ বলেন, وَفِيْ عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ – مَا تَذَرُ مِنْ شَيْءٍ أَتَتْ عَلَيْهِ إِلاَّ جَعَلَتْهُ كَالرَّمِيْمِ ‘এবং নিদর্শন রয়েছে ‘আদ-এর কাহিনীতে, যখন আমরা তাদের উপরে প্রেরণ করেছিলাম অশুভ বায়ু’। এই বায়ু যার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল, তাকেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল’ (যারিয়াত ৫১/৪১-৪২)। একই ক্রিয়াপদ অত্র হাদীছে ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বনু ইস্রাঈলের উপরে দলাদলির যে গযব আপতিত হয়েছিল, একই ধরনের গযব আমার উম্মতের উপরে আপতিত হবে। ‘এক জোড়া জুতার পরস্পরে সমান হওয়ার ন্যায়’ বাক্যটি আনা হয়েছে দুই উম্মতের অবস্থার সামঞ্জস্য বুঝাবার জন্য।

রাসূল (ছাঃ)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণী হযরত ওছমান (রাঃ)-এর মর্মান্তিক শাহাদাতের প্রাক্কাল থেকেই শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীতে আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর রাজনৈতিক দলাদলিকে যুক্তিসিদ্ধ করতে গিয়ে সৃষ্টি হয় উছূলী বিভক্তি। এভাবে দলাদলির শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে হযরত আলীকে এবং তৎপুত্র হযরত হোসায়েন, আশারায়ে মুবাশশারাহর সদস্য হযরত যোবায়ের, হযরত তালহা, পরে হযরত আব্দুল্লাহ বিন যোবায়ের প্রমুখ খ্যাতনামা ছাহাবীগণকে। এরপর উমাইয়া শাসনামলে তাদের বিরোধী গণ্য করে খ্যাতনামা তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব, মুহাম্মাদ ‘নফসে যাকিইয়াহ’ (পবিত্রাত্মা) সহ শত শত বিদ্বান সরকারী নির্যাতন ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। বনু ইস্রাঈল তাদের হাযার হাযার নবীকে হত্যা করেছে। মুসলমানরা উম্মতের উপরোক্ত সেরা ব্যক্তিবর্গকে হত্যা করেছে, যারা ছিলেন উম্মতের নক্ষত্রতুল্য। এরপর হিজরী দ্বিতীয় শতক থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন বিদ‘আতী ও ভ্রান্ত দলের পন্ডিতবর্গ প্রাণান্ত কোশেশ করে যাচ্ছেন কুরআন-হাদীছের পরিবর্তন কিংবা সেখানে কিছু যোগ-বিয়োগ করার জন্য। যদিও তারা সর্ব যুগে ব্যর্থ হয়েছেন, এখনও হচ্ছেন এবং সেটা হ’তেই হবে। কেননা আল্লাহ স্বয়ং কুরআন ও হাদীছের হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন (হিজর ১৫/৯; ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৬-১৯)। তথাপি তাদের এই অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং যা ইহুদী-নাছারাদের তাওরাত-ইঞ্জীল বিকৃতির চেষ্টার সাথে অনেকটা তুলনীয়। বর্তমান যুগে মুসলিম দেশগুলিতে ইহুদী-নাছারা পন্ডিত ও রাজনৈতিক নেতাদের আবিষ্কৃত ও চালুকৃত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ, সমাজবাদ প্রভৃতি মতবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook comments