সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’আলার জন্য, যিনি আমাদের জন্য দীনকে করেছেন পরিপূর্ণ, আর আমাদের জন্য সম্পন্ন করেছেন তার অসংখ্য ও অগণিত নি’আমতসমূহ এবং এ উম্মত তথা মুসলিম জাতিকে বানিয়েছেন সমগ্র উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম উম্মত। আমাদের থেকেই একজনকে রাসূল হিসেবে আমাদের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করেছেন, যিনি আমাদের নিকট আল্লাহ তা’আলার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, আমাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন এবং আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ ও সংশোধন করেন। আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সে মহামানবের ওপর, যাকে সমগ্র জগতবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং নির্বাচন করা হয়েছে নেক আমলকারীদের জন্য আদর্শস্বরূপ। আরও সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তার সমগ্র পরিবারবর্গ ও সাথী সঙ্গীদের ওপর, যারা নবীগণের পর দুনিয়াতে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আমীন।
একজন মুসলিম বান্দার ওপর আল্লাহ তা’আলার নি’আমত ও অনুগ্রহ এত বেশি যে, দুনিয়ার কোনো হিসাব-নিকাশ তা আয়ত্ত করতে পারবে না এবং হিসাব করে শেষও করা যাবে না। বিশেষ করে, আল্লাহ তা’আলা একজন মুসলিমকে এ মহান দীনের প্রতি যে হিদায়াত দিয়েছে, এর চেয়ে বড় নি’আমত দুনিয়াতে আর কিছুই হতে পারে না। কারণ, আল্লাহ তা’আলা নিজেই এ দীনের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করেছেন এবং তিনি তার বান্দাদের জন্য এ দীনকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং পছন্দ করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, তার বান্দাদের থেকে এ দীন ছাড়া অন্য কোনো আর কিছুই তিনি কবুল করবেন না। কারণ, এ দীনের কোনো বিকল্প নেই, আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির কল্যাণের জন্য এ দীনকেই বাছাই করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائدة: ٣]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি’আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।” [সূরা আল-মায়েদাহ্, আয়াত: ৩]
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ﴾ [ال عمران: ١٩]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট মনোনীত দীন হলো ইসলাম। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]
“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায়, তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
﴿وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِي قُلُوبِكُمۡ وَكَرَّهَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكُفۡرَ وَٱلۡفُسُوقَ وَٱلۡعِصۡيَانَۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلرَّٰشِدُونَ ٧ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَنِعۡمَةٗۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٨﴾ [الحجرات: ٧، ٨]
“আর তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। সে যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিত, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফুরী পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাইতো সত্য পথপ্রাপ্ত ছিল| আল্লাহর পক্ষ থেকে করুণা ও নি’আমতস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ৭-৮]
আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দীন এমন, যা দ্বারা আল্লাহ সংশোধন করেছেন মানব জাতির নৈতিক চরিত্র ও বিশ্বাস এবং দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে করেছেন সুন্দর। যারা এ দীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও আনুগত্য করবে এবং দীনের নির্দেশকে যথাযথ পালন করবে, আল্লাহ তাদেরকে যাবতীয় ভ্রান্তি ও গোমরাহী থেকে মুক্ত রাখবেন, তারা কখনই বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হবে না এবং কোনো প্রকার গোমরাহী তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। এ দীনকে বাদ দিয়ে যারা অন্য পথে গিয়েছে, তারা পদে পদে বিপদের সম্মূখীন হয়েছে। তারা গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা যাদের এ দীনের প্রতি হিদায়াত দিয়েছে, তারাই দুনিয়াতে আলোর সন্ধান পেয়েছে।
মনে রাখতে হবে, এ দীন হলো, অত্যন্ত মজবুত ও শক্তিশালী দীন, যার কোনো বিকল্প নেই, এ দীনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অতীব সুদৃঢ় ও বস্তুনিষ্ঠ। এ দীনের দিকে পথনির্দেশ বা আহ্বান করা যেমন মহৎ, অনুরূপভাবে যারা এ দীনের ডাকে সাড়া দেবে, তাদের পরিণতি ও ফলাফল সবই হবে মধুর ও সুখকর।
আরও মনে রাখতে হবে, এ দীনের প্রতিটি সংবাদ সঠিক ও নির্ভুল। বিধানসমূহ ইনসাফ-পূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ। এমন কোনো আদেশ দেওয়া হয় নি যার সম্পর্কে কোনো সত্যিকার জ্ঞানী ব্যক্তি বলতে পারে, দীনের এ আদেশটি যথার্থ বা প্রযোজ্য নয়। আবার এমন কোনো নিষেধও করা হয় নি, যার সম্পর্কে কোনো বুদ্ধিমান বলতে পারে এ কাজটি হতে নিষেধ করা অযৌক্তিক বা এ নিষেধটি না করলে ভালো হত। দুনিয়াতে আজ পর্যন্ত এমন কোনো সত্যিকার জ্ঞানের আবির্ভাব হয় নি; যা দ্বারা এ দীনের কোনো বিধানকে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে এবং এমন কোনো বিধান আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারে নি যার দ্বারা দীনের কোনো বিধানকে অযৌক্তিক প্রমাণ করা যেতে পারে। এ দীন এমন একটি দীন, যা মানুষের স্বভাবের সাথে আঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এ দীন মানুষকে সঠিক পথ দেখায় ও হকের সন্ধান দেয়, সত্যের পতাকা তলে আশ্রয় দেয়। সততা হলো এ দীনের নিদর্শন, আর ইনসাফ হলো এ দীনের ভিত্তি, হক্ব হলো এ দীনের খুঁটি, রহমত হলো এ দীনের আত্মা ও শেষ প্রান্তর এবং কল্যাণ হলো এ দীনের চির সাথী। সংশোধন ও সতর্ক করা এ দীনের সৌন্দর্য ও কর্ম, আর উত্তম চরিত্র হলো এ দীনের সম্বল ও উপার্জন।