যখন আল্লাহর সাহায্য আসিল এবং বিজয়; এবং তুমি দেখিলে মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করিতেছে। এখন তুমি আল্লাহর স্মরণে আত্মনিয়োগ কর এবং গোনাহের জন্য ক্ষমা চাও। নিশ্চয় তিনিই তওবা করুল করেন।”
বিদায় হজ্বের প্রস্তুতি উপরোক্ত সূরা নাযিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানবতার নবী হযরত রসূলে খোদা (সা) অনুমান করিতে পারিলেন, শেষ বিদায়ের সময় ঘনাইয়া আসিয়াছে। ইতিপূর্বে তিনি আল্লাহর ঘর পবিত্র করার চূড়ান্ত ব্যবস্থা করিয়া ফেলিয়াছিলেন। তিনি নির্দেশ দিয়াছিলেন, আগামীতে আর কোন মোশরেক আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করিতে পারিবে না। কোন ব্যক্তিকে উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর তোয়াফ করিতেও দেওয়া হইবে না।
হযরত রসূলে খোদা (সা) হিজরতের পর আর হজ্ব পালন করার সুযোগ পান নাই। হিজরী দশ সনে আগ্রহ জন্মিয়াছিল, আখেরাতের পথে রওনা হওয়ার পূর্বে সমস্ত উম্মতের সহিত মিলিত হইয়া শেষবারের মত হজ্ব করিয়া নিবেন। বিপুলভাবে আয়োজন করা হইল যেন কোন ভক্তই এই পবিত্র সফরে সাহচর্যের সৌভাগ্য হইতে বঞ্চিত না হয়। হযরত আলী (রা) কে ইয়ামন হইতে ডাকিয়া আনা হইল। আশেপাশের সকল জনপদে লোক প্রেরণ করিয়া এই পবিত্র ইরাদার কথা প্রচার করিয়া দেওয়া হইল। উম্মুল মোমেনীনদের সকলকে সঙ্গে চলার সুখবর দেওয়া হইল। হযরত ফাতেমা (রা)ও প্রস্তুতির নির্দেশ পাইলেন।
২৫শে জিলক্বদ মসজিদে নবনীতে জুমার নামায হইল। এই জামাতেই ২৬ তারিখ রওয়ানা হওয়ার কথা ঘোষণা করিয়া দেওয়া হইল। ২৬ তারিখে সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইতুল্লার পথে যাত্রার খশীতে রসূলে খোদার (সা) পবিত্র চেহারা উদ্ভাসিত হইয়া উছিল। গোসল শেষ করিয়া নূতন পোশাক পরিধান করিলেন এবং জোহরের নামায পড়ার পর আল্লাহর মহিমা কীর্তন করিতে করিতে নদীনা হইতে বাহির হইলেন। হাজার হাজার আত্মত্যাগী উম্মত প্রিয়নবী (সা) এর সঙ্গে চলিলেন। এই পবিত্র কাফেলা মদীনা হইতে ছয় মাইল দূরে যুলহোলায়ফা নামক স্থানে আসিয়া প্রথম মঞ্জিল করিল।
পরদিন সকালে আল্লাহর রসূল (সা) পুনরায় গোসল করিলেন। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) নিজ হাতে তাঁহার পবিত্র বদনে আতম মাখিয়া দিলেন। দ্বিতীয় বার রওয়ানা হওয়ার পূর্বে আর একবার আল্লাহর প্রিয় নবী আল্লাহর দরবাদে দাঁড়াইলেন এবং নেহায়েত কাতরভাবে দুই রাকাত নামায আদায় করিলেন। অতঃপর সোয়ারীর উপর আরোহণ করতঃ এহরাম বাঁধিলেন এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তনসূচল ‘লাব্বাইক’ তারানা শুরু করিলেনঃ (আরবী**********)
পবিত্র মুখের মহিমা গানের সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার খোদা-পুরস্তের মুখে উহার প্রতিধ্বনি হইতে লাগিল। আকাশের মহাশূন্য আল্লাহর মহিমা কীর্তন ভরিয়া উঠিল। পাহাড়-প্রান্তর তওহীদের তারানায় মুখরিত হইয়া উঠিল। হযরতহ জাবের (রা) বলেন, হুজুর সারওয়ারে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের অগ্রে-পশ্চাতে, দক্ষিণে-বাবে, যে পর্যন্ত দৃষ্টি যাইত, কেবলমাত্র মানুষই দেখা যাইতেছিল। যখন হযরতের উষ্ট্র কোন উচ্চ টিলার উপর আরোহণ করিত, তখন তিনি তিন বর উচ্চ কণ্ঠে তকবীর ধ্বনি করিতেন। পবিত্র কণ্ঠের তকবীরের সঙ্গে সঙ্গে অগণিত কণ্ঠে তাহা প্রতিধ্বনিত হইয়া এই পবিত্র কাফেলার মধ্যে যেন আল্লাহর মহিমা কীর্তনের প্লাবন বহিয়া যাইত। দীর্ঘ নয় দিন এই পবিত্র কাফেলার যাত্রা চলিল।