আজ ২৮ শে জুন শুক্রবার। আমার কারাজীবনের আটচল্লিশতম দিন অতিক্রম হচ্ছে। যারা কোন দিন কারাভোগ করেননি, কারাগারের জীবন সম্পর্কে তাদের অনেকের ভীতি থাকে মাত্রাতিরিক্ত। আবার অনেকে কারাজীবন সম্পর্কে কৌতুহল বোধ করেন।
নানা রকম প্রান্তিক ধারণা মানুষের আছে এই কারাগার তথা জেলখানা সম্পর্কে। সে যাই হোক, কারাজীবন যে মুক্ত জীবন থেকে ব্যতিক্রম, এ ব্যাপারে সবার ধারণাই অভিন্ন!। কারাগারের জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতার জীবন। নানাজনের নানা অনুভূতি থাকে এ জীবনের অভিজ্ঞতা বিষয়ে
যারা লেখক, কবি -সাহিত্যিক বা ভাবুক তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি নিয়ে বড় বড় গ্রন্থও রচনা করেন। জেল জীবনের কাহিনী নয়ে রচিত গ্রন্থের সংখ্যা কম হবে না। ভাগ্যচক্রে আমি যখন কারাগারে আসলাম। সুহৃদদের মধ্যে সাক্ষাত করতে আসা কেউ কেউ আমাকেও বলল, ভিতরে লেখালেখি করার সুযোগ পেলে যেন আমিও আমার কারাগারের দিনগুলো নিয়ে দু-চার কলম লিখি।
ভাগ্নে এহসান তো একরকম পীড়াপীড়ি করল কিন্তু এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ বেশি হয় না। কারণ আমাদের কারাজীবনে শিক্ষণীয় বা প্রেরণার তেমন কোন উপাদান পাওয়া যাবে বরে আমার মনে হয় না। যুগে যুগে জালিমের জিন্দানখানায় সত্ব্যপন্থী মুজলম মানুষেরা যে রকম জুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েও সত্যের পথে অটল থেকেছেন।
জালিমের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দ্বীনের ঝান্ডা সমুন্নত করেছেন তার দীর্ঘ দীর্ঘ দাস্তান ইতিহাসের পাতায় রক্তের আকরে লিপিবদ্ধে আছে। আর বর্তমান সময়কার কারাজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, কারাগারের বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জী নিয়ে সময়ের সেরা লেখকদের বড় বড় গ্রন্থ রচিত রয়েছে। তাই আমি এ বিষয়ে লিখলে নতুন কিছু পাঠকরা পাবে বলে মনে হয় না।
এরপরও আমি একান্ত মহব্বতের কিছু মানুষ আছে যারা হয়ত বিশেষভাবে আমার কারাজীবনের বিবরণ, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো জানতে আগ্রহী হবেন। একান্ত আপনজনদের কেউ কেউ এমন আকুতিও প্রকাশ করেছেন। তাদের কথা বিবেচনা করে এ সংক্রান্ত কিছু কথা লেখার মনস্থ করলাম।