ড. আফিয়া বসনিয়ার মজলুম নারী ও শিশুদের জন্য একাই এক হাজার ডলার জমা করেন যা সম্ভবত কোনো ছাত্রীর পক্ষ থেকে ফান্ড গঠনের বিশ্ব রেকর্ড ছিল। শত শত বসনিয়ান এতিমকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আমেরিকায় খুঁজে খুঁজে মুসলিম পরিবার বের করেছেন। তিনি কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্যও এক লক্ষ রুপি জমা করেন। আফিয়া ভদ্রতা ও চারিত্রিক মাধুর্যতার জন্য সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রিয় ছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই দানের হাত প্রশ্বস্ত করেন।
কোমল হৃদয়ের অধিকারী ড. আফিয়ার ঘরের অনর্থক পশু-পাখির প্রতিও ছিল সীমাহীন ভালোবাসা। তিনি চড়ুই পাখির বাচ্চাকে মৃত্যুবরণ করতে দেখলেও কষ্ট পেতেন। বৃদ্ধ ও দুর্বল ব্যক্তিদের প্রতি তার ছিল বিশেষ অনুরাগ। আমেরিকায় গিয়েও আফিয়া প্রায়ই বৃদ্ধাশ্রমে যেতেন। বয়স্ক মহিলাদের দেখাশোনা করতেন, গোসল করিয়ে দিতেন, চুল আঁচড়ে দিতেন। কখনো কখনো মানসিক রোগীদেরও সেবা করতে যেতেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। তার বোন জিজ্ঞেস করেছিলেন এসব প্রতিবন্ধী শিশুর সেবা সে কেন করে, যারা কিনা বিনিময়ে একটা ধন্যবাদও দিতে পারবে না। এদিকে আশ্রমের বৃদ্ধারা অনেকেই তো আরও অকৃতজ্ঞ। পারলে অভিশাপ দেবে। আফিয়া বলেছিল কৃতজ্ঞ লোকের জন্য তো সেবা করার মানুষের অভাব নেই। এই দুর্ভাগা মানুষগুলো কারো কোনো সুনজর থেকে বঞ্চিত। এজন্য আমি তাদের সেবাই করি।
ইসলাম প্রচার
আফিয়া সিদ্দিকী পবিত্র কুরআনের হাফেজা ছিলেন। ইসলামের প্রতি ছিল সীমাহীন ভালোবাসা। তিনি মনে করতেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ শান্তির প্রত্যাশায় জাহান্নামের দিকে যাচ্ছে। সুতরাং মুসলমানদের দায়িত্ব হলো তাদের কুরআনের পথ দেখানো। তিনি বলতেন, আমেরিকা আমাকে জাগতিক শিক্ষা দিয়েছে আর আমি আমেরিকার জনগণকে ইসলামের শিক্ষা দেবো। এই উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে ড. আফিয়া তার বোন ড. ফাওজিয়াকে সাথে নিয়ে ইনিস্টিউট অফ ইসলামিক রিসার্চ এন্ড টিচিং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ইনিস্টিউটে কুরআনের দাওয়াতকে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বক্তৃতার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ড. আফিয়া হাজার হাজার কপি কুরআন বিতরণ করেছেন। বিশেষভাবে কারাগারে অবস্থানরত বন্দিদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন এবং কুরআন বিতরণ করেছেন। মার্কিন গবেষক ও স্কলার স্টিফেন ল্যান্ডমিন বলেন, “ড. আফিয়া সিদ্দিকীর অপরাধ শুধু একটিই সেটা হলো, সে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ইসলামের প্রচার-প্রসার করেছিলেন।”