ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী

0/5 No votes

Report this app

Description

আজ গোটা দুনিয়ার অসংখ্যা মানব কাফেলা এ সংকল্পে নিয়ে চলেছে যে, তারা তাদের জীবনের সফরকে ঐ পথেই পরিচালিত করবে, যে পথ প্রদর্শন করে গিয়েছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স)। তারা তাদের ব্যক্তি ও সমষ্টিগত জীবনকে সেই হিদায়াত অনুযায়ী গড়ে তুলতে চায়, যা রেখে গেছেন রাসূলে খোদা (স)। বিগত কয়েকশ শতাব্দী থেকে মানব কাফেলা এমন এক পথে চলে আসছে যা তাঁর পথ থেকে, ভিন্নতর ও বিপরীতমুখী। তাই বর্তমান দুনিয়ার তাঁর পথে চলাটা চাট্টিখানি কথা নয়। এ পথে রয়েছে অসংখ্য বাঁধা প্রতিবন্ধকতা। সীমাহীন সমস্যা সংকট। অপরদিকে পথিকরাও দুর্বল অক্ষম। আরোহীরা ক্লান্ত রোগাক্রান্ত ও বৃদ্ধ। পথ জগদ্দলয়ময় কিন্তু সান্ত্বনার বিষয় হচ্ছে, তাঁর পদাংকের বদৌলতে এ পথে মরুভূমির পাথরও রেশমী কোমল। এ জন্য হাজারো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সংখ্যা বেড়েই চলেছে কাফেলার। অব্যাহত রয়েছে সফরের গতি। বর্তমান দুনিয়ার এসব কাফেলার নাম ইসলামী আন্দোলন।

 

যে কাফেলা নিজের ও মানব সমাজের জীবনযাপনের জন্যে বিনির্মাণ করতে চায় একটি রাজপথ, তার কামিয়াবীর জন্যে স্বীয় ঈমান, ইয়াকীন, ইচ্ছা, সংকল্প, আমল, আচরণ এবং চরিত্র ও কুরবানীর সাথে সাথে তার একজন উৎকৃষ্ট সেনাপতিরও প্রয়োজন। যেমনি করে কাফেলার প্রতিটি পদক্ষেপের জন্যে একটি মাত্র পদাংকই অনুসরণযোগ্য এবং তা হচ্ছে রাসূল মুস্তাফার পদাংক। তেমনি, কাফেলার নেতার জন্যেও সেই একই পদাংকের অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও কামিয়াবী, যা রেখে গেছেন প্রথম নেতা রাসূলুল্লাহ (স)। সত্য কথা বলতে কি, কাফেলার প্রতিটি সদস্যেই কোনো না কোনো স্থানের নেতা। তাদের প্রত্যেকরেই সেই হেদায়াত ও পথনির্দেশের মুখাপেক্ষী যা রয়েছে নবী মোম্স্তুফা (স)-এর পদাংক।

 

তাঁর পদাংকগুলোকে স্পষ্ট আলোকিত করার যোগ্যতা তো আর আমার নেই। এ পথে ইলমের চেয়ে তাকওয়া, আমল ও রাসূলকে অনুসরণের পাথেয় অধিক প্রয়োজন। আমি এসব দিক থেকেই দরিদ্র। রাসূলে খোদার (স) সীরাত সম্পর্কে কিছু বলা বা লেখা এমনিতেই সূর্যকে চেরাগ দেখানোর সমতুল্য। এ কোনো চাট্টিখানি সাহসের কথা নয়।

 

কিন্তু করাচীতে জামিয়াতুল ফালাহর উদ্যেগে আয়োজতি এক অনুষ্ঠানে “নেতা ও শিক্ষক হিসেবে নবী করীম (স)” শিরোনামে তাঁর সীরাত ও আদর্শেও আলোচনা করতে হয়। কিছুদিন পর সেখানকার সে-কথাগুলোই একটা খসড়া পান্ডুলিপি আকারে আমাকে দেওয়া হয়।

বিষয়বস্তুর গুরুত্ব আমার নিকট পরিষ্কার ছিলো। এজন্যে কিছুটা সাহস করে সেই বক্তৃতাকে ভিত্তি করেই এ বইটি তৈরী করি। এখন এই লেখাটি আকারে ও প্রকারে উভয় দিক করেই এ বইটি তৈরী করি। এখন এই লেখাটি আকারে ও প্রকারে উভয় দিক থেকেই আর সেই বক্তৃতার মতো থাকেনি, যা জামিয়াতুল ফালাহর সমাবেশে পেশ করা হয়েছিল। অবশ্য মূল বিষয়বস্তু সেই বক্তৃতা থেকেই নেয়া হয়েছে। আমার ধারণা, এ দ্বারা সম্ভবত ইসলামী আন্দোলনের কাফেলার কোনো প্রয়োজন পূরণ হতে পারে।

 

এতে কোনো কথাই সম্ভবত নতুন নয়। সীরাতে রাসূলের উপর অনেক কিছুই লেখা হয়েছে। কিন্তু তাঁর জীবন কাহিনী এতোই মিষ্টি মধুর যে, তা যতোই দীর্ঘ হয়, অপূর্ণই থেকে যায়। সত্য কথা হলো, যা কিছু লেখা হওয়া উচিত তার তুলনায় এখনো কিছুই লেখা হয়নি। এ অনুভূতিই আমাকে এ পুস্তিকা প্রণয়নে অনুপ্রাণিত করেছে যে, আমার দ্বারা যদি কেউ সেই ভান্ডারের একটি মুক্তা এবং সেই সূর্যেও একটি রশ্মিও লাভ করতে পারে, তবে সেই সওয়াব থেকে আমি কোন বঞ্চিত হবো? সাথে সাথে আমার এ আস্থা এবং বিশ্বাসও আশ্বারোহীর পায়ের কাটার মতো আমার শরীরে ফুটতে থাকে যে, সর্বপ্রকার শ্রেষ্ঠত্ব এবং সমগ্র দৌলত নিয়ামত কেবল তাঁর আদর্শেও অনুকরণের মধ্যেই লুক্কায়িত রয়েছে।

 

আমি ভাই সাইয়েদ লুৎফুল্লাহ সাহেব এবং মুসলিম সাজ্জাদের নিকট কৃতজ্ঞ যে, তারা আমাকে বক্তৃতা করার সুযোগ দিয়েছেন এবং খসড়া পান্ডুলিপি তৈরী করে দিয়েছেন। কিন্তু সর্বাধিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার জীবন সংগিনী লুমআতুন নূরকে, যার ধৈর্য সহনশীলতা এবং সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া কয়েক দিন ধরে সকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কাজে লেগে থাকতে পারতাম না।

 

আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করছি, তিনি যেনো এ ক্ষুদ্র উপহারটুকু কবুল করে নেন এবং সবার আগে আমাকে একথাগুলোর উপর আমল করার তাওফিক দান করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook comments