অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধির নাম। এ অহংকার নামক ক্যানসার যার মনে জায়গা করে নিয়েছে, তার জন্য ধ্বংস অনিবার্য। অহংকার মানুষকে কখনো সফলতায় পৌঁছতে দেয় না। অহংকার মানুষের অধপতন ডেকে আনে। বিনয় যেমন মাটির মানুষকে আকাশের উচ্চতায় উঠিয়ে দিতে পারে, ঠিক এর বিপরীতে অহংকার আকাশ থেকে মানুষকে মাটিতে নিক্ষেপ করতে সময়ের প্রয়োজন বোধ মনে করে না। লোকমান হাকীম তার ছেলেকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘হে প্রিয় বৎস! তুমি কখনো অহংকার করে রাস্তা দিয়ে চলো না। কারণ অহংকার করে তুমি মাটিকে ছিদ্র করতে পারবে না। পাহাড়ের উপরে উঠতে পারবে না। গাছকে উপড়ে ফেলতে পারবে না। তাহলে অহংকার করে কি বোঝাতে চাও? তিনটি জিনিস মানুষকে ধ্বংস করে দেয়- লোভ, অহংকার ও হিংসা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আগুন যেভাবে শুকনো লাকড়ি জ্বালিয়ে দেয়, ঠিক অহংকার মানুষদের আমলকে জ্বালিয়ে দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কেউ যখন নিচে তাকায়, তখন সবকিছুই তার কাছে ছোট ছোট মনে হয়। নিজের দুই চোখ দিয়ে হাজারো মানুষকে সে ছোট করে দেখে। আবার যারা নিচে আছে তারাও তাকে ছোটই দেখে। তবে দুই চোখের পরিবর্তে তখন এক হাজার মানুষের দুই হাজার চোখ তাকে ছোট করে দেখে।’ অর্থাৎ অহংকার করে একজন যখন সবাইকে তুচ্ছ মনে করে তখন এ অহংকারীকেও অন্য সবাই তুচ্ছ মনে করে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জমিনের ওপর দিয়ে কেউ অহংকার করে হেঁটো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’
অহংকার হচ্ছে সব পাপের মূল। একে আরবিতে বলা হয় ‘উম্মুল আমরায’ সকল রোগের জননী। ‘শয়তান’ শয়তান হয়েছে অহংকারের কারণে। হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের আদেশ করেছিলেন- তোমরা আদমকে সিজদা কর। সবাই সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু ইবলিশ করল না। ফেরেশতাদের মাঝে বেড়ে ওঠা ইবলিশ মাটি আর আগুনের যুক্তি হাজির করল। সে আগুনের তৈরি বলে মাটির তৈরি মানুষকে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানালো। অহংকারের কারণে সেদিন শয়তান হজরত আদম (আ.)-এর সম্মানকে অস্বীকার করে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ করল। আর তাই আল্লাহ তায়ালা তার গলায় লানতের তকতা ঝুলিয়ে তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা করে দিলেন।
পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ২৩) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম শরিফ) হাদিসে কুদসিতে এসেছে- ‘অহংকার আল্লাহ তায়ালার চাদর। এ চাদর ধরে যারা টানাটানি করে আল্লাহ তায়ালা তা সহ্য করেন না। অহংকারীকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামে নিক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মানুষের উচিত অহংকারের মতো বড় পাপ না করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘বড়ত্ব আমার চাদর এবং মহানত্ব আমার ইযার (লুঙ্গি)। কেউ যদি এ দুইটির কোনো একটির ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (মুসলিম, মিশকাত) আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নম্রতা অবলম্বন করে সে নিজের কাছে ক্ষুদ্র, কিন্তু মানুষের চোখে মহান। আর যে অহংকার করে চলে সে নিজের কাছে বড়, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে হেয় করিয়ে দেয়। ফলে সে মানুষের চোখে ছোট হয়ে যায়। এমনকি সে মানুষের কাছে কুকুর শূকর অপেক্ষা নিকৃষ্ট হয়ে পড়ে।