আফগানিস্তানের লোকেদের রীতি-রেওয়াজের এবং সাধারণ জীবনযাপনের যে ধারণা আমরা এখানে করে থাকি তা অনেকটা পালটে গেল। আফগানিস্তানে যে শুধু মিনির রহমত থাকে না সেটা বলাবাহুল্য। একটা দেশের মানুষ কীভাবে অচিন্তনীয় দুরবস্থা থেকে বারবার বেঁচে উঠে নতুন জীবনের আশা ধরে রাখে।
আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা ও তালিবানদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে এই বইগুলি পড়ুন। বিশেষ ভাবে সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’ – এই বইটি।
রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে হয়েও পরিবারের সবাইকে উপেক্ষা করে বিয়ে করেছিলেন ভিনদেশি এক মুসলিম যুবককে। এবং তাকে বিশ্বাস করে পাড়ি দিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ি সুদূর আফগানিস্তানে। কিন্তু সেখানে গিয়ে বুঝতে পারলেন যে এরা সবাই ভণ্ড, ধর্মান্ধ। ওদেশে একবার কেউ ঢুকলে আর বেরোবার পথ থাকে না। লেখিকা বন্দী হলেন শ্বশুরবাড়ি নামক এক সেন্ট্রাল জেলে। যে প্রেমিকের হাত ধরে গিয়েছিলেন সেই স্বামীও ফেলে রেখে পালিয়ে এলেন ভারতে। নিজের বলতে কেউ নেই। চলল অকথ্য সব অত্যাচার। শারীরিক, মানসিক। অনাহারে অনিদ্রায় দিন কাটে তার। বন্ধু স্বজনরা তাঁকে টানে। মন স্বদেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মন যেতে চায় মা-বাবার স্নেহের ছায়ায়। অথচ তাঁরা কেউ-ই তাঁর হদিস জানেন না। সুদীর্ঘ আট বছর ধরে চলে এই অসহ্য যন্ত্রণা। সহ্য করতে করতে তিনি বলা চলে মরিয়া। প্রতিজ্ঞা : এদের পরাস্ত করবেন যে করেই হোক, যেমন করেই হোক। কাবুলে তখন তালিবান বনাম রাব্বানির যুদ্ধ তুঙ্গে। অগত্যা পাকিস্তানে পালিয়ে চলে যান। উদ্দেশ্য, সেখানে ইন্ডিয়ার অ্যামবাসির কর্মীরা সাহায্য করবে দেশে ফিরতে। বিধি বাম অ্যামবাসির বড়কর্তা প্রস্তাব দেন শয্যাসঙ্গিনী হলেই পাবেন মুক্তি। অথচ পাকিস্তানের পুলিশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কোনও কিছুর মূল্যে নয়। সেখানেও বাধ সাধল তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ফলে বাধ্য হলেন আবার আফগানিস্তানে ফিরে যেতে। এবার শ্বশুরবাড়ি আর সেন্ট্রাল জেল নয় পরিণত হল তিহার জেলে। এরপরও কী অসম্ভব রকমের বিপর্যয় ঘটেছে লেখিকার জীবনে, সেই ভয়ার্ত করুণ কাহিনীই ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’ বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।