অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধি

0/5 No votes

Report this app

Description

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আগুন যেভাবে শুকনো লাকড়ি জ্বালিয়ে দেয়, ঠিক অহংকার মানুষদের আমলকে জ্বালিয়ে দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কেউ যখন নিচে তাকায়, তখন সবকিছুই তার কাছে ছোট ছোট মনে হয়। নিজের দুই চোখ দিয়ে হাজারো মানুষকে সে ছোট করে দেখে। আবার যারা নিচে আছে তারাও তাকে ছোটই দেখে। তবে দুই চোখের পরিবর্তে তখন এক হাজার মানুষের দুই হাজার চোখ তাকে ছোট করে দেখে।’ অর্থাৎ অহংকার করে একজন যখন সবাইকে তুচ্ছ মনে করে তখন এ অহংকারীকেও অন্য সবাই তুচ্ছ মনে করে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জমিনের ওপর দিয়ে কেউ অহংকার করে হেঁটো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’

অহংকার হচ্ছে সব পাপের মূল। একে আরবিতে বলা হয় ‘উম্মুল আমরায’ সকল রোগের জননী। ‘শয়তান’ শয়তান হয়েছে অহংকারের কারণে। হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের আদেশ করেছিলেন- তোমরা আদমকে সিজদা কর। সবাই সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু ইবলিশ করল না। ফেরেশতাদের মাঝে বেড়ে ওঠা ইবলিশ মাটি আর আগুনের যুক্তি হাজির করল। সে আগুনের তৈরি বলে মাটির তৈরি মানুষকে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানালো। অহংকারের কারণে সেদিন শয়তান হজরত আদম (আ.)-এর সম্মানকে অস্বীকার করে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ করল। আর তাই আল্লাহ তায়ালা তার গলায় লানতের তকতা ঝুলিয়ে তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা করে দিলেন।

পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ২৩) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম শরিফ) হাদিসে কুদসিতে এসেছে- ‘অহংকার আল্লাহ তায়ালার চাদর। এ চাদর ধরে যারা টানাটানি করে আল্লাহ তায়ালা তা সহ্য করেন না। অহংকারীকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামে নিক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মানুষের উচিত অহংকারের মতো বড় পাপ না করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘বড়ত্ব আমার চাদর এবং মহানত্ব আমার ইযার (লুঙ্গি)। কেউ যদি এ দুইটির কোনো একটির ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (মুসলিম, মিশকাত) আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নম্রতা অবলম্বন করে সে নিজের কাছে ক্ষুদ্র, কিন্তু মানুষের চোখে মহান। আর যে অহংকার করে চলে সে নিজের কাছে বড়, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে হেয় করিয়ে দেয়। ফলে সে মানুষের চোখে ছোট হয়ে যায়। এমনকি সে মানুষের কাছে কুকুর শূকর অপেক্ষা নিকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

অহংকারের কয়েকটি লক্ষণ : ১. মানুষের কাছ থেকে সর্বদা সম্মান আশা করা। ২. কোনো দরিদ্র লোককে দেখে নাক সিটকানো। ৩. অন্যের কাছ থেকে সালাম পাওয়ার আশা করা। ৪. উপরের দিকে তাকিয়ে পথ চলা। ৫. বড়কে সম্মান না করা। ৬. আলেমকে মূল্যায়ন না করা। ৭. নিজেকে বেশি জ্ঞানী মনে করা এবং অন্যকে গাধা মনে করা। ৮. কোনো ইবাদতে আল্লাহর কাছে নিজেকে সাধারণ লোক অপেক্ষা উৎকৃষ্ট বলে মনে করা। ৯. অন্যের থেকে সালামের আশা করা। ১০. বংশ মর্যাদায় নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা। ১১. দৈহিক বলে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা। ১২. প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকে নিজেকে নিয়ে নিজেকে গর্ব করা। ১৩. লোক দেখানো ইবাদত করা বা আল্লাহর রাস্তায় দান করা। ১৪. অন্যের কাছে ভালো হওয়ার জন্য সমস্ত ভালো কাজ করা। ১৫. নিজেই নিজের প্রশংসা করা। ১৬. অন্যের ভালো সহ্য করতে না পারা, হিংসা, ঈর্ষা করা। ১৭. শুধু নিজের ভালোর কথাই চিন্তা করা। অর্থাৎ স্বার্থপর। ১৮. সত্য ও ন্যায়কে অস্বীকার করা। ২৯. নম্র ব্যবহার না করা।

অহংকার জান্নাতের অন্তরায়। জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই মুমিন মুসলমানের অহংকারমুক্ত থাকা জরুরি। হাদিসে এসেছে- ‘যার অন্তরে এক যাররা (অণু) পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত) হাদিস শরিফে অহংকারী ব্যক্তির বিশেষ চারটি শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : ১. অহংকারী ব্যক্তি কবর থেকে ওঠার সময় নিজের দেহ পিপীলিকার মতো ছোট দেহ নিয়ে উঠবে। ২. জাহান্নামের দুর্গন্ধ স্থানে তাদের জায়গা দেওয়া হবে। ৩. লাঞ্ছনা চারদিক থেকে তাকে ঘেরাও করে নেবে। ৪. নিজের শরীর থেকে মাংস গলে গলে নিচে পড়বে আর অহংকারী ব্যক্তি নিজের মাংস নিজেই ভক্ষণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook comments