ইলম অধ্যয়নের পদ্ধতি

0/5 No votes

Report this app

Description

 

ইসলামে দ্বীনী ইলম অর্জনের অবকাশ সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কোনো বংশের লোক, যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ, যে কোনো অঞ্চলের অধিবাসী কুরআন-সুন্নাহর ইলম অর্জন করতে পারেন; বরং ইসলামে তা কাম্য। কুরআন-সুন্নাহয় এ বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ

যে কেউ ইলমের খোঁজে কোনো পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। -মুসনাদে আহমদ ১৪/৬৬

ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন باب ما جاء في فضل الفقه অর্থাৎ ‘ফিকহের (দ্বীনের সহীহ সমঝ) মর্যাদা সংক্রান্ত বর্ণনা’।

দ্বীনী ইলম অর্জনের এই সাধারণ সুযোগ ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাবে যদি এ বিষয়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্ম-গ্রন্থ ও ধর্মীয় বিধিবিধান সম্পর্কে জানা শোনা থাকে। ইসলামের আরেক সৌন্দর্য হচ্ছে দ্বীনী ইলমের চর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা রোধ। ইসলাম একদিকে যেমন ইলম অর্জনের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে অন্যদিকে সঠিক উপায়ে ইলম অর্জন না করে দ্বীনী বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়াকে চরম অপরাধ সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং ইসলামে ইলমের ক্ষেত্রে যেমন ব্রাহ্মন্যবাদ বা শ্রেণিবিশেষের ইজারাদারি নেই তেমনি অরাজকতা বা অযোগ্য লোকের অনুপ্রবেশেরও সুযোগ নেই। এই দুই প্রান্তিকতার মাঝে যে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি সেটিই ইসলামী নীতি- ইলম অর্জনের সুযোগ সবার জন্য অবারিত আর সঠিক উপায়ে ইলম অর্জন ছাড়া ইলমী সিদ্ধান্ত দেওয়া নিষিদ্ধ।

ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি

দ্বীনী ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, আলিমগণের নিকট থেকে ইলম অর্জন করা।

হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন-

خُذُوا الْعِلْمَ قَبْلَ أَنْ يَذْهَبَ

‘ইলম অর্জন কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। সাহাবীগণ আরয করলেন-

وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، وَفِينَا كِتَابُ اللَّهِ؟

আল্লাহর নবী! ইলম কীভাবে বিদায় নেবে, আমাদের মাঝে তো রয়েছে আল্লাহর কিতাব?

বর্ণনাকারী বলেন, এ কথায় তিনি রুষ্ট হলেন। এরপর বললেন-

ثَكِلَتْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ أَوَلَمْ تَكُنِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمْ شَيْئًا؟ إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ، إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ

তোমাদের  মরণ হোক! বনী ইসরাইলের মাঝে কি তাওরাত ও ইঞ্জীল ছিল না, কিন্তু এতে তো তাদের কোনোই উপকার হল না! ইলমের প্রস্থানের অর্থ তার বাহকগণের প্রস্থান। -মুসনাদে আহমদ ৫/২৬৬; আদদারেমী ১/৮৬, হাদীস ২৪৫

হাদীসের শুরুতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন ‘ইলম গ্রহণ কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। এরপর ‘ইলম বিদায় নেওয়ার’ অর্থ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ইলম বিদায় নেওয়ার অর্থ আলিমগণের বিদায় নেওয়া। তাহলে এ হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমের বাহক তথা আলিমগণের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করতে বলেছেন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ শিক্ষার প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই তাঁর সাহাবীগণের কণ্ঠে।

হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

مَا لِي أَرَى عُلَمَاءَكُمْ يَذْهَبُونَ وَجُهَّالَكُمْ لَا يَتَعَلَّمُونَ؟ تعلَّموا قَبْلَ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، فَإِنَّ رَفْعَ الْعِلْمِ ذَهَابُ الْعُلَمَاءِ

হায়! তোমাদের আলিমগণ বিদায় নিচ্ছেন কিন্তু তোমাদের বে-ইলম শ্রেণি ইলম অর্জন করছে না। ইলম উঠিয়ে নেওয়ার আগেই ইলম হাসিল কর। ইলম উঠিয়ে নেওয়ার অর্থ আলিমদের প্রস্থান। -আদ দারেমী ২৫১

শুধু একটি উদাহরণ দেওয়া হল। হাদীসের কিতাবে এরকম আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে।

এটি হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরোক্ত হাদীসের একটি শিক্ষা। ঐ হাদীস থেকে দ্বিতীয় যে বিষয়টি জানা যাচ্ছে, তা হচ্ছে, শুধু গ্রন্থ নির্ভুল ইলমের জামিন নয় এবং শুধু গ্রন্থ-নির্ভরতা ইলম অর্জনের সঠিক উপায় নয়। এমনকি তা আসমানী কিতাব হলেও না। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জ্বলন্ত বাস্তবতার- তাওরাত ও ইঞ্জিলের উদাহরণ দান করেছেন। বনু ইসরাইলের মাঝে তো তাওরাত ও ইঞ্জিল ছিল। কিন্তু যোগ্য বাহকগণের বিদায় নেওয়ার পর তাদের সুযোগ্য উত্তরসূরীর অভাবে শুধু তাওরাত-ইঞ্জিলের আসমানী ইলম থেকেই ঐ জাতি বঞ্চিত হয়নি খোদ তাওরাত-ইঞ্জিলের মূল পাঠই হারিয়ে গেছে এবং এর মর্ম ও শিক্ষাও চরম বিকৃতির শিকার হয়েছে। এমনই হয়। কিতাবের যথার্থ শিক্ষা গ্রহণে যদি মানব-মস্তিষ্ক ব্যর্থ হয় এবং কিতাবের আলোয় তার হৃদয় ও কর্ম সংশোধিত না হয় তখন ঐ পাঠক নিজের চিন্তা ও রুচির আলোকে কিতাব ‘সংশোধনে’ প্রয়াসী হয়ে ওঠে। এভাবে এবং আরো বিভিন্নভাবে তাহরীফ ও বিকৃতির সূত্রপাত ঘটে। আর এতো বলাই বাহুল্য যে, কিতাবের সঠিক মর্ম ও শিক্ষা অনুধাবন ও গ্রহণের জন্য এমন প্রাজ্ঞ ও আদর্শ শিক্ষকের প্রয়োজন যিনি হবেন সব অর্থে ঐ কিতাবের বাহক। নতুবা কিতাব জ্ঞান ও আলোর সূত্র হওয়া সত্তে¡ও গ্রহণের উপায় সঠিক না হওয়ার কারণে কিতাবের পাঠক কিতাবের আলো থেকে বঞ্চিত থাকবে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, শুধু ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি নয়। এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস লক্ষ করুন।

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

মানুষের উপর এমন এক যুগের আগমন ঘটবে যখন অনেক হবে পাঠকের সংখ্যা আর হ্রাস পাবে ফকীহের সংখ্যা আর ইলম তুলে নেওয়া হবে ও রক্তপাত ছড়িয়ে পড়বে। -আলমুজামুল আওসাত তবারানী,  হাদীস ৩২৭৭; আলমুসতাদরাক হাকীম ৪/৪৫৭, হাদীস ৮৪১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook comments